নতুন অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন বরাদ্দ ৪ বছরে সর্বনিম্ন

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে দেশের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট ১৪ শতাংশ কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে—আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) হতে পারে দুই লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এটি গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। চলতি অর্থবছরে তা দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত সভায় প্রস্তাবিত বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়। আগামী ১৮ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন হওয়ার কথা আছে।

মোট বরাদ্দের মধ্যে এক লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জোগাড় করা হবে। বিদেশি সহায়তা থেকে আসবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো (এসওই) নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্পে আট হাজার কোটি টাকা দেবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে এসওই'র ১৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার উন্নয়ন খরচের তুলনায় তা অনেক কম।

বিশ্লেষকরা বলছেন—এর মাধ্যমে দুর্বল রাজস্ব আদায়, জাতীয় বাজেটের আগে আর্থিক শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা ও বিদ্যমান তহবিলের ব্যবহার কম হওয়ার কারণেই বরাদ্দ কমানোর কারণ হতে পারে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এটি অন্তত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

অর্থনীতিবিদরা বার্ষিক উন্নয়ন বরাদ্দ কমানোকে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি 'বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত'।

আগামী বাজেটে তারা সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণ ও সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত সরকারের রাজস্ব আহরণ সীমিত হওয়ার কারণে উন্নয়ন খরচ কমছে।'

তার মতে, 'তবে আরেকটি কারণ হলো, এর আগে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে অনেকগুলোই ব্যয়বহুল এবং সেগুলো থেকে দ্রুত মুনাফা পাওয়ার আশা নেই।'

তার মতে, 'বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে নিম্ন-প্রবৃদ্ধি ও নিম্ন-মূল্যস্ফীতির দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে আমাদের অবশ্যই খরচ কমাতে হবে। তবে এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানও কমবে।'

'মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের মধ্যে ভারসাম্য অপরিহার্য,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমাদের প্রত্যাশা মেটাতে হবে। জোর করে একটি সূচক উন্নত করার চেষ্টা করা হলে অন্য সূচক আরও কমে যেতে পারে। এ ধরনের সংকট এড়িয়ে চলতে হবে।'

বাংলাদেশের পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) প্রধান অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমানও একই মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইএমএফের বাজেট সহায়তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে এবার অবাস্তবভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এর পরিবর্তে, আর্থিক শৃঙ্খলার দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে। রাজস্ব বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে এবং মূল খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।'

রাজস্ব আদায় ও উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে দীর্ঘদিনের ফারাকের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আপনি যদি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি গত ১৫ বছরে রাজস্ব আদায়ের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন আমাদের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি বেশ কম। এখনো বলা হচ্ছে, রাজস্ব বোর্ড লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না।'

'সার্বিকভাবে সরকার যদি এ বছর দুই লাখ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে পারে, আমি বলব তা হবে সৎ অর্জন। তারা যদি সেই সংখ্যার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে, তাহলে বর্তমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির দিকে তাকালে দেখা যাবে, প্রকৃত বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম হওয়ার সম্ভাবনা আছে।'

'আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে,' বলে মনে করেন আশিকুর রহমান। তিনি আরও বলেন, 'বিশেষ করে যেহেতু অনেক ইউনিয়ন পরিষদ অকার্যকর এবং বরাদ্দ স্থগিত হয়েছে। এটি কম আয়ের মানুষদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে।'

'বরাদ্দে অবশ্যই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প নিতে হবে।'

তিনি মনে করেন, এবারের বাজেটে নমনীয় হওয়ার খুব বেশি সুযোগ নেই। রাজস্ব আদায় অনেক কম। এর জন্য শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

9h ago